আপনার যাকাত সহজে হিসাব করতে এখানে ক্লিক করুন

যাকাত কি?

আরবি শব্দ যাকাতের অর্থ হল বৃদ্ধি, পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা। ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে যাকাত অন্যতম। ইসলামি পরিভাষায় ধনী ব্যক্তিদের নিসাব (নির্ধারিত) পরিমাণ সম্পদ থাকলে নির্দিষ্ট অংশ গরিব ও অভাবী লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়াকে যাকাত বলে। অর্থ সম্পদ মানুষের হাতে পুঞ্জিভূত থাকুক আল্লাহ্‌ তা পছন্দ করেন না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেনঃ

وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ তোমরা নামায কায়েম কর, এবং যাকাত প্রদান কর। (সূরা মুযযামমিল, আয়াত ২০)

যাকাত হল আল্লাহপাক প্রদত্ত দরিদ্রদের অধিকার। ধনীদের অনুগ্রহ নয়। যাকাত আদায় করা ধনীদের উপর আল্লাহপাক ফরজ করে দিয়েছেন। আল্লাহপাক আরও বলেনঃ

وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ এবং তাদের (ধনীদের) ধন-সম্পদে দরিদ্র ও বঞ্চিতের হক রয়েছে। (সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত ১৯)

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত/যাদের উপর যাকাত ফরজ

যাকাত সবার উপর ফরজ নয়। শুধুমাত্র ধনীদের উপর ফরজ করা হয়েছে। যদি কারও নিসাব (নির্ধারিত) পরিমাণ সম্পদ থাকে তাঁকে অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে। যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সাতটি। শর্তগুলোর বিবরণ নিচে দেওয়া হলোঃ

  • মুসলিম হওয়াঃ যাকাত ফরজ হওয়ার পূর্ব শর্ত হলো মুসলিম হওয়া। অমুসলিমদের উপর যাকাত ফরজ নয়। যদি কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তাঁকে অতীত জীবনের যাকাত দিতে হবে না। যেদিন থেকে সে মুসলিম হয়েছে সেদিন থেকে হিসেব করে যাকাত দিতে হবে।
  • নিসাবের মালিক হওয়াঃ কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা রুপা কমপক্ষে সাড়ে বায়ান্ন তোলা অথবা ঐ মূল্যের অর্থ বা সম্পদ থাকে তাঁকে যাকাত আদায় করতে হবে।
  • নিসাব পরিমাণ সম্পদ প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়াঃ জীবনযাপনে প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমনঃ বাসগৃহ, জমি, গাড়ি, কৃষি সরঞ্জাম ইত্যাদির উপর যাকাত ফরজ নয়।
  • ঋণগ্রস্ত না হওয়াঃ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও তার উপর যাকাত ফরজ নয়। তবে ঋণ পরিশোধ করার পর যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ কারো থাকে তাহলে তাঁকে যাকাত দিতে হবে।
  • সম্পদ বা অর্থ এক বছর স্থায়ী থাকাঃ নিসাব পরিমাণ সম্পদ যদি কারও হাতে এক বছর কাল স্থায়ী না হয় তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ নয়। এই বিষয়ে একটি হাদিস রয়েছে,
    “ঐ সম্পদের যাকাত নেই যা পূর্ণ এক বছর মালিকানায় না থাকে।” (ইবনে মাজাহ)
  • জ্ঞানসম্পন্ন হওয়াঃ জ্ঞানবুদ্ধিহীন তথা পাগলের উপর যাকাত ফরজ নয়। যাকাত ফরজ হওয়ার পূর্ব শর্ত হল জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া ।
  • বালেগ হওয়াঃ শিশু, নাবালেগ থাকা অবস্থায় নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও তার উপর যাকাত ফরজ নয়। কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক বালেগদের উপর যাকাত ফরজ করা হয়েছে।

কোন কোন অর্থ/সম্পদ কি পরিমাণ থাকলে যাকাত ফরয হয়

  • যদি কারও নিকট শুধু সােনা থাকে কিন্তু রুপা, টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য কিছুই না থাকে, তাহলে সাড়ে সাত তােলা বা তার বেশি সোনা থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরয হয়।
  • যদি কারও নিকট শুধু রুপা থাকে কিন্তু সােনা, টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য কিছুই না থাকে, তাহলে সাড়ে বায়ান্ন তােলা (রুপা) থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরয হয়।
  • যদি কারও নিকট কিছু সােনা থাকে এবং তার সাথে কিছু রুপা বা কিছু টাকা-পয়সা বা কিছু ব্যবসায়িক পণ্য থাকে, তাহলে এ ক্ষেত্রে সােনার সাড়ে সাত তােলা বা রুপার সাড়ে বায়ান্ন তােলা দেখা হবে না বরং সােনা, রুপা এবং টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য যা কিছু আছে সবটা মিলে যদি সাড়ে সাত তােলা সােনা বা সাড়ে বায়ান্ন তােলা রুপার যেকোনাে একটার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায়, তাহলে (বৎসরান্তে) তার উপর যাকাত ফরয হবে।
  • যদি কারও নিকট শুধু টাকা-পয়সা থাকে- সােনা, রুপা ও ব্যবসায়িক পণ্য কিছু না থাকে, তাহলে সাড়ে সাত তােলা সােনা বা সাড়ে বায়ান্ন তােলা রুপার যেকোনাে একটার মূল্যের সমপরিমাণ (টাকা-পয়সা) থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরয হবে।
  • কারও নিকট সােনা, রুপা ও টাকা-পয়সা কিছুই নেই শুধু ব্যবসায়িক পণ্য রয়েছে, তাহলে উপরােক্ত পরিমাণ সােনা বা রুপার যেকোনাে একটার মূল্যের সমপরিমাণ থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরয হবে।
  • কারও নিকট সােনা, রুপা নেই শুধু টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য রয়েছে, তাহলে টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য মিলিয়ে যদি উক্ত পরিমাণ সােনা বা রুপার যেকোনাে একটার মূল্যের সমপরিমাণ হয় তাহলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরয হবে।

যেসব অর্থ বা সম্পদের উপর যাকাত দিতে হয় না।

১। ব্যবসায়িক পণ্য ছাড়া ঘরে যে আবসাব-পত্র, কাপড়-চোপড়, থালাবাসন, হাড়ি-পাতিল, ফ্রিজ, আলমারি, শােকেজ, পড়ার বই ইত্যাদি থাকে তার উপর যাকাত আসে না ।

২। থাকা বা ভাড়া দেয়ার উদ্দেশ্যে যে ঘর-বাড়ী নির্মাণ করা হয় বা ক্রয় করা হয় কিংবা অনুরূপ উদ্দেশ্যে যে জমি ক্রয় করা হয় সে ঘর-বাড়ী ও জমির মূল্যের উপর যাকাত আসে না। তবে ব্যবসা/বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত বাড়ী ও জমির মূল্যের উপর যাকাত আসে ।

৩। কারও কারখানা থাকলে এবং উক্ত কারখানায় কোন উৎপাদন হলে সে উৎপানের কাজে যে মেশিন, যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র ব্যবহৃত হয়, মিলফ্যাক্টরীতে যে গাড়ী ও যানবাহন ব্যবহৃত হয়, তার মূল্যের উপর যাকাত আসে না বরং যাকাত আসে উৎপাদিত মালামাল ও ক্রয়কৃত কাঁচামালের উপর ।

৪। রিকশা, বেবী, টেক্সি, বাস, ট্রাক, লঞ্চ, স্টীমার ইত্যাদি যা ভাড়ায় খাটানাে হয় অথবা যা দিয়ে উপার্জন করা হয়, তার মূল্যের উপর যাকাত আসে না। অবশ্য এসব যানবাহনই যদি কেউ ব্যবসার (বিক্রয়ের) উদ্দেশ্যে ক্রয় করে থাকে তাহলে তার মূল্যের উপর যাকাত আসবে ।

৫। পেশাজীবীরা তাদের পেশার কাজ চালানাের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি ও আসবাব-পত্র ব্যবহার করে থাকে, তার মূল্যের উপর যাকাত আসে না। যেমন: কৃষকের ট্রাক্টর, ইলেকট্রিশিয়ানদের ড্রিল মেশিন ইত্যাদি ।

৬। যদি কারও নিকট ব্যবহারের উদ্দেশ্যে হীরা, মণি, মুক্তা, ডায়মন্ড ইত্যাদির অলংকার থাকে, তাহলে তার মূল্যের উপর যাকাত আসে না। তবে এরূপ নিয়তে রাখা হলে যে, এটা একটা সঞ্চয় প্রয়ােজনের মুহূর্তে বিক্রি করে নগদ অর্থ অর্জন করা যাবে- এরূপ হলে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে ।

৭। প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ হাতে পাওয়ার পূর্বে তার উপর যাকাত আসে না। তবে যে টাকাটা কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলক নয় বরং চাকরিজীবী স্বেচ্ছায় কর্তন করায় তার উপর যাকাত আসবে । এটা হল সরকারী চাকরির প্রভিডেন্ট ফান্ডের মাসআলা। আর প্রাইভেট কোম্পানীর প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা হাতে পাওয়ার পূর্বেও তার যাকাত দিতে হবে । এমনিভাবে সরকারী চাকরির ক্ষেত্রেও চাকরিজীবী যদি প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকায় কোনাে ইস্যুরেন্স কোম্পানীতে অংশ নেয় তাহলেও তার যাকাত দিতে হবে।

৮। না-বালেগ ও পাগল-এর অর্থ/সম্পত্তিতে যাকাত আসে না।

যাকাত হিসাব করার নিয়ম

১। যে অর্থ/সম্পদে যাকাত আসে সে অর্থ/সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত আদায় করা ফরয (অর্থাৎ ২.৫%)। মূল্যের আকারে নগদ টাকা দ্বারা বা তা দ্বারা কোনাে আসবাব-পত্র ক্রয় করে তা দ্বারাও যাকাত দেয়া যায়।

২। যাকাতের ক্ষেত্রে চন্দ্র মাসের হিসাবে বৎসর ধরা হবে। যখনই কেউ নেছাব পরিমাণ অর্থ/সম্পদের মালিক হবে তখন থেকেই তার যাকাতের বৎসর শুরু ধরতে হবে।

৩। সােনা রুপার মধ্যে যদি ব্রঞ্জ, রাং, দস্তা, তামা ইত্যাদি কোনাে কিছুর মিশ্রণ থাকে আর সে মিশ্রণ সােনা রুপার চেয়ে কম হয়, তাহলে পুরােটাকেই সােনা রুপা ধরে যাকাতের হিসাব করা হবে। মিশ্রিত দ্রব্যের কোনাে ধর্তব্য হবে না। আর যদি মিশ্রিত দ্রব্য সােনা রুপার চেয়ে অধিক হয়, তাহলে সেটাকে আর সােনা রুপা ধরা হবে না। বরং ঐ মিশ্রিত দ্রব্যই ধরা হবে।

৪। যাকাত হিসাব করার সময় অর্থাৎ, ওয়াজিব হওয়ার সময় সােনা, রুপা, ব্যবসায়িক পণ্য ইত্যাদির মূল্য ধরতে হবে তখনকার (ওয়াজিব হওয়ার সময়কার) বাজার দর হিসাবে এবং সােনা রুপা ইত্যাদি যে স্থানে রয়েছে সে স্থানের দাম ধরতে হবে।

৫। শেয়ারের মূল্য ধরার ক্ষেত্রে মাসআলা হল- যারা কোম্পানীর লভ্যাংশ (Dividend) অর্জন করার উদ্দেশ্যে নয় বরং শেয়ার ক্রয় করেছেন শেয়ার বেচা-কেনা করে লাভবান হওয়া (Capital Gain)-এর উদ্দেশ্যে, তারা শেয়ারের বাজার দর (Market Value) ধরে যাকাত হিসাব করবেন। আর শেয়ার ক্রয় করার সময় যদি মূল উদ্দেশ্য থাকে কোম্পানী থেকে লভ্যাংশ (Dividend) অর্জন করা এবং সাথে সাথে এ উদ্দেশ্যও থাকে যে, শেয়ারের ভাল দর বাড়লে বিক্রিও করে দিব, তাহলে যাকাত হিসাব করার সময় শেয়ারের বাজার দরের যে অংশ যাকাতযােগ্য অর্থ/সম্পদের বিপরীতে আছে তার উপর যাকাত আসবে, অবশিষ্ট অংশের উপর যাকাত আসবে না। উদাহরণ স্বরূপ শেয়ারের মার্কেট ভ্যালু (বাজার দর) ১০০ টাকা, তার মধ্যে ৬০ ভাগ কোম্পানীর বিল্ডিং, মেশিনারিজ ইত্যাদির বিপরীতে, আর ৪০ ভাগ কোম্পানীর নগদ অর্থ, কাঁচামাল ও তৈরী মালের বিপরীতে, তাহলে যাকাতের হিসাব করার সময় শেয়ারের বাজার দর অর্থাৎ, ১০০ টাকার ৬০ ভাগ বাদ যাবে। অবশিষ্ট ৪০ ভাগের উপর যাকাত আসবে

৬। যাকাতদাতার যে পরিমাণ ঋণ আছে সে পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে বাকিটার যাকাত হিসাব করবে । ঋণ পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে যদি যাকাতের নেছাব পূর্ণ না হয় তাহলে যাকাত ফরয হবে না। তবে হযরত মাওলানা মুফতী তাকী উছমানী সাহেব বলেছেন, যে লােন নিয়ে বাড়ি করা হয় বা যে লােন নিয়ে মিল ফ্যাক্টরী তৈরি করা হয় বা মিল ফ্যাক্টরীর মেশিনারিজ ক্রয় করা হয়, এমনিভাবে যেসব লােন নিয়ে এমন কাজে নিয়ােগ করা হয় যার মূল্যের উপর যাকাত আসে না -যেমন: বাড়ি ও ফ্যাক্টরী বা ফ্যাক্টরীর মেশিনারিজের মূল্যের উপর যাকাত আসে না- এসব লােন যাকাতের জন্য বাধা নয় অর্থাৎ, এসব লােনের পরিমাণ অর্থ যাকাতের হিসাব থেকে বাদ দেয়া যাবে না। হ্যাঁ, যে লােন নিয়ে এমন কাজে নিয়ােগ করা হয় যার মূল্যের উপর যাকাত আসে যেমন: লােন নিয়ে ফ্যাক্টরীর কাঁচামাল ক্রয় করল (এখানে কাঁচামালের মূল্যের উপর যাকাত আসে) এরূপ ক্ষেত্রে এ লােন পরিমাণ অর্থ যাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে । মুফতী তাকী উছমানী সাহেব এ মাসআলাটিকে শক্তিশালী যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত করেছেন, অতএব তার মতটি গ্রহণ করার মধ্যেই সতর্কতা রয়েছে ।

৭। কারও নিকট যাকাতদাতার টাকা পাওনা থাকলে সে পাওনা টাকার যাকাত দিতে হবে। পাওনা তিন প্রকার। যথা: (এক) কাউকে নগদ টাকা ঋণ দিয়েছে কিংবা ব্যবসায়ের পণ্য বিক্রি করেছে এবং তার মূল্য বাকি রয়েছে। এরূপ পাওনা কয়েক বৎসর পর উসূল হলে যদি পাওনা টাকা এত পরিমাণ হয়। যাতে যাকাত ফরয হয়, তাহলে অতীত বৎসরসমূহের যাকাত দিতে হবে। যদি একত্রে উসূল না হয় ভেঙ্গে ভেঙ্গে উসূল হয়, তাহলে ১১ তােলা রুপার মূল্য পরিমাণ হলে যাকাত দিতে হবে। এর চেয়ে কম পরিমাণ উসূল হলে তার যাকাত ওয়াজিব হবে না- তবে অল্প অল্প করে সেই পরিমাণে পৌছে গেলে তখন ওয়াজিব হবে। আর যখনই ওয়াজিব হবে তখন অতীত সকল বৎসরের যাকাত দিতে হবে। আর যদি এরূপ পাওনা টাকা নেছাবের চেয়ে কম হয় তাহলে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না।

(দুই) নগদ টাকা ঋণ দেয়ার কারণে বা ব্যবসায়ের পণ্য বাকিতে বিক্রি করার কারণে পাওনা নয় বরং ঘরের প্রয়ােজনীয় আসবাব-পত্র, কাপড়-চোপড়, চাষাবাদের গরু ইত্যাদি বিক্রয় করেছে এবং তার মূল্য পাওনা রয়েছে, এরূপ পাওনা যদি নেছাব পরিমাণ হয় এবং কয়েক বৎসর পর উসূল হয় তাহলে ঐ কয়েক বৎসরের যাকাত দিতে হবে। আর যদি ভেঙ্গে ভেঙ্গে উসূল হয় তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সাড়ে বায়ান্ন তােলা রুপার মূল্য পরিমাণ না হবে ততক্ষণ যাকাত ওয়াজিব হবে না। যখন উক্ত পরিমাণ উসূল হবে তখন বিগত বৎসরসমূহের যাকাত দিতে হবে ।

(তিন) মহরের টাকা, পুরস্কারের টাকা, খােলা তালাকের টাকা, বেতনের টাকা ইত্যাদি পাওনা থাকলে এরূপ পাওনা উসূল হওয়ার পূর্বে যাকাত ওয়াজিব হয় না । উসূল হওয়ার পর ১ বৎসর মজুদ থাকলে তখন থেকে তার যাকাতের হিসাব শুরু হবে। পাওনা টাকার যাকাত সম্পর্কে উপরােল্লিখিত বিবরণ শুধু তখনই প্রযােজ্য হবে যখন এই টাকা ব্যতীত তার নিকট যাকাতযােগ্য অন্য কোনাে অর্থ/সম্পদ না থাকে। আর অন্য কোনাে অর্থ/সম্পদ থাকলে তার মাসআলা উলামায়ে কেরাম থেকে জেনে নিবেন।

৮। যে ঋণ ফেরত পাওয়ার আসা নেই, এরূপ ঋণের উপর যাকাত ফরয হয় না । তবে পেলে বিগত সমস্ত বৎসরের যাকাত দিতে হবে।

৯। যৌথ কারবারে অর্থ নিয়ােজিত থাকলে যৌথভাবে পূর্ণ অর্থের যাকাত হিসাব করা হবে না বরং প্রত্যেকের অংশের আলাদা আলাদা হিসাব হবে।

১০। যেসব সােনা রুপার অলংকার স্ত্রীর মালিকানায় দিয়ে দেয়া হয় সেটাকে স্বামীর সম্পত্তি ধরে হিসাব করা হবে না বরং সেটা স্ত্রীর সম্পত্তি। আর যেসব অলংকার স্ত্রীকে শুধু ব্যবহার করতে দেয়া হয়, মালিক থাকে স্বামী, সেটা স্বামীর সম্পত্তির মধ্যে ধরে হিসাব করা হবে। আর যেগুলাের মালিকানা অস্পষ্ট রয়েছে তা স্পষ্ট করে নেয়া উচিত। যেসব অলংকার স্ত্রীর নিজস্ব সম্পদ থেকে তৈরী বা যেগুলাে বাপের বাড়ি থেকে অর্জন করে, সেগুলাে স্ত্রীর সম্পদ বলে গণ্য হবে। মেয়েকে যে অলংকার দেয়া হয় সেটার ক্ষেত্রেও মেয়েকে মালিক বানিয়ে দেয়া হলে সেটার মালিক সে। আর শুধু ব্যবহারের উদ্দেশ্যে দেয়া হলে মেয়ে তার মালিক নয়। নাবালেগা মেয়েদের বিয়ে-শাদি উপলক্ষে তাদের নামে যে অলংকার বানিয়ে রাখা হয় বা নাবালেগ ছেলে কিংবা মেয়ের বিবাহ-শাদীতে ব্যয়ের লক্ষ্যে তাদের নামে ব্যাংকে বা ব্যবসায় যে টাকা লাগানাে হয় সেটার মালিক তারা । অতএব সেগুলাে পিতা/মাতার সম্পত্তি বলে গণ্য হবে না এবং পিতা/মাতার যাকাতের হিসাবে সেগুলাে ধরা হবে না। আর বালেগ সন্তানের নামে শুধু অলংকার তৈরী করে রাখলে বা টাকা লাগালেই তারা মালিক হয়ে যায় না যতক্ষণ না সেটা সে সন্তানদের দখলে দেয়া হয়। তাদের দখলে দেয়া হলে তারা মালিক, অন্যথায় সেটার মালিক পিতা/মাতা।

১১। হিসাবের চেয়ে কিছু বেশি যাকাত দিয়ে দেয়া উত্তম। যাতে কোন রুপ কম হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। প্রকৃতপক্ষে সেটুকু যাকাত না হলেও তাতে দানের ছওয়াব তো হবেই।

আপনার যাকাত সহজে হিসাব করতে এখানে ক্লিক করুন